বিশ্বকাপ তো শেষ হলাে, তারপর?

বিশ্বকাপ তো শেষ হলাে, তারপর?

ফুটবল বিশ্বকাপের সময় টিভির সামনে হুমড়ি খেয়ে পড়ে মানুষ। মন্ত্রমুগ্ধের মতাে তাকিয়ে থাকে পর্দার দিকে। এক মাস কিংবা তারও বেশি সময় ধরে মানুষের রুটিন আবর্তিত হতে থাকে বিশ্বকাপকে ঘিরে। পত্রিকাগুলাে খুব ঘটা কবে এই কর্মকাণ্ডকে পরিচয় করিয়ে দেয়া "বিশ্বকাপ উন্মাদন"' বলে। আসলেই এ এক উন্মাদনা। এই উন্মাদনা নিয়ে কিছু কথা বলা দরকার। আমি কাউকে দোষারােপ করব না। কারও সমালােচনা করব না। বিশ্বকাপের লাভক্ষতি বিশ্লেষণও আনার উদ্দেশ্য না। আমি কেবল ভবিষ্যতের জন্যে ছােট্ট একটা বার্তা দিতে চাই। আমার ভাইয়েরা, বলুন তাে, আমাদের কি নিষ্ক্রিয় দর্শকের সারি থেকে উঠে সক্রিয় হবার সময় আসেনি? আমাদের কি সময় আসেনি অনুসারী হবার বদলে কর্মী হবার? টিভি-পর্দার সামনে বসে থাকা দর্শক যাই করুক না কেন, খেলার মােড় তাতে বদলায় না। দর্শক খেলার ফলাফলকে প্রভাবিত করতে অক্ষম। তার কাজ শুধুই দেখে যাওয়া আর নিজের আবেগ খরচ করা। আপনি যতদিন দর্শকের সিটে থাকবেন ততদিন আপনি নিষ্ক্রিয়, অক্ষম। কিন্তু যারা আল্লাহর ওপর ভরসা করে তাঁর সৈনিকে পরিণত হয়ে যায়, তারা অক্ষম না। তারা ঘুড়িয়ে দিতে পারে ময়দানের খেলার মােড়। বদলে দিতে পারেন ইতিহাস। হাফপ্যান্ট পরা কোনাে এক পূর্ণবয়স্ক পুরুষ ট্রফি উঁচিয়ে বলে আজ আমরা বসে বসে হাততালি দিই। কিন্তু আমাদের কি এমন কিছু করা উচিত না, যাতে করে কিয়ামতের দিন আমরা গর্বভরে আমাদের আমলনামা তুলে ধরতে পারি? বলতে পারি, . فيقول هاؤم اقرأوا كتابية ( ۹۱ ) إلي ظننت اني ملاق جايية নাও! আমার আমলনামা পড়ে দেখাে! আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে, আমি আমার হিসাবের সম্মুখীন হব। [তরজমা, সূরা আল-হাক্বা, ১৯-২০] এবং সেইদিন পুরস্কৃত হতে পারি?
گلوا واشربوا فهو ل بشه راضيه ( ۶۱ ) في جو عالية ( ۲۲ ) لونها ذاية ۲۳۵ فينا يا أعلم في الأيام الخالية সুতবাং, সে সন্তোষজনক জীবনে থাকবে। সুউচ্চ জান্নাতে, তাঁর ফলসমূহ নিকটবর্তী থাকবে। তাকে বলা হবে, বিগত দিনসমূহে তােমরা যা সামনে পাঠিয়েছ, তাঁর বিনিময়ে তোমরা তৃপ্তি-সহকালে খাও এ পান করাে! [তরজমা, সূরা আল-হাক্বা, ২১-২৪] আল্লাহর নামে বলছি, ওপরের আয়াতগুলাে আরেকবার পড়ুন। 'আর্জেন্টিনা জিতেছে', "ব্রাজিল জিতেছে', ফ্রান্স জিতেছে', "আমার দল জিতেছে', এসব কথা সাথে ওপরের আয়াতের বক্তব্যের একটু তুলনা করার চেষ্টা করুন তাে। আদৌ কি কোনাে তুলনা হয়? কী ফেলে রেখে কিসের পেছনে ছুটছি আমরা? আচ্ছা আপনার টিম জিতেছে, বুঝলাম। তাতে কী হয়েছে? তাতে কার কী আসে-যায়? পরের ধাপ কী? আপনার টিম জেতার পর কী হবে? সত্যি বলতে কি, আমি নিজে খেলাধুলা পছন্দ করি। ফুটবল আমার পছন্দের খেলা। খুব একটা ভালাে খেলতে না পারলেও, নিয়মিত খেলার চেষ্টা করি। আমি খেলি ব্যায়ামের জন্য। আর আমার বাকি সময় কাজে লাগানাের চেষ্টা করি। চেষ্টা করি উপকারী কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে। ফুটবলের প্রতি বিশেষ কোনাে ঘৃণা বা বিদ্বেষ নিয়ে আমি কথা বলছি না। আমি শুধু প্রশ্ন করছি, আমাদের কি এখনাে মাঠের বলগুলাের দিকে তাকিয়ে থাকার সময় আছে? এখনো কি সময় আসেনি খেলার মাঠ থেকে মনােযােগ সরিয়ে বিশ্বের সমস্যাগুলাে সমাধানের দিকে মনােযোগ দেয়ার? আল্লাহ কি এ জন্যই আমাদের পাঠাননি? گم خير أمة أخرجت للثام তােমরাই হলে সর্বোত্তম উন্মত, যাদের মানুষের জন্যে বের করা হয়েছে....
[তরজমা, সূরা আলে ইমরান, ১১০] আপনি হয়তাে বলবেন, এত বড় বড় স্বপ্ন দেখার সময় আপনার নেই। এগুলাে অবাস্তব চিন্তা। মােটই না! আল্লাহর কসম! আপনি যদি আল্লাহর ওপর ভরসা করে নিজের সাধ্যমতো চেষ্টা করেন, তাহলে আল্লাহ আপনার কাজে এমন বারাকাহ দেবেন, যা আপনি কল্পনাও করেননি। একবার চিন্তা করে দেখুন। আল্লাহ বলছেন আমরা সর্বোত্তম জাতি, যাদের মানবজাতির কল্যাণের জন্য পাঠানাে হয়েছে। কিন্তু আজ আমরা নিজেদের সীমাবদ্ধ করে রেখেছি দর্শকের কাতারে। আমাদের সময়, আবেগ, চিন্তা কেন্দ্রীভূত হয়ে আছে এমন সব টুর্নামেন্টের পেছনে, যেগুলাে না মানবজাতির কোনাে উপকারে আসে আর না এতে কারও দুঃখ-দুর্দশা দূর হয়। আমাদের কি সময় আসেনি সর্বোত্তন প্রতিযােগিতায় অংশ নেয়ার? এখনাে কি সময় আসেনি পৃথিবীর বুকে সত্য ও ন্যাযের প্রতিষ্ঠার জন্য প্রতিযােগিতা করার? চিরসুখের অধিকারী কিন্তু হবে সত্য প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট মানুষগুলােই। عرضها كفرص الشفاء والأزم ایفوا إلى مغفرة من تنگ و তােমরা তােমাদের রবের পক্ষ থেকে ক্ষমা ও সেই জান্নাতের দিকে যাওয়ার প্রতিযােগিতায় অবতীর্ণ হও, যার প্রশস্ততা আসমান ও যমীনের প্রশস্ততার মতাে...
[তরজমা, সূরা আল-হাদীদ, ২১] আমেরিকায় কৌফম্যান ফাউন্ডেশন নামে একটা প্রতিষ্ঠান আছে। এর প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট নিয়ে দু-বছরের একটা কোর্স করায়। কোর্স ফী ৭২ হাজার ডলারের আশেপাশে। প্রায় ৬১ লাখ টাকা। এই আকাশচুম্বী ফ্রী সত্বেও অনেকে এই কোর্সগুলো করে। অনেক মুসলিমও করে। এত টাকা, এত সময় শুধু একটা প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট কোর্সের জন্য।
বলুন তাে, উন্মাহর প্রজেক্ট, সমগ্র মানজাতির মুক্তি ও আখিরাতের নিরাপত্তার জন্য যে প্রকল্প তার জন্য কতটুকু সময়, শ্রম আর অর্থ ব্যয় করা উচিত যে প্রজেক্টের উদ্দেশ্য উম্মাহর পুনর্জাগরণ, মানবজাতির মাকে নিজেদের অগ্রবর্তী ভূমিকা খুঁজে নেয়া, যে প্রজেক্টের উদ্দেশ্য আল্লাহ যমিনে তাঁর দ্বীনের প্রতিষ্ঠা করা এবং এর মাধ্যমে মানুষের দুনিয়া ও আখিরাতের জীবনকে কল্যাণ ও বরকতময়। করা তাঁর জন্য আমরা কতটুকু সময় দিচ্ছি? আমাদের ধর্ম সব দিক বিবেচনা করে', ইসলাম এত কঠিন না', ইসলাম যুক্তিসম্মত', ইসলাম সব যুগে প্রযোজ্য', এ ধরনের অনেক কথাই তাে আমরা বলি। কিন্তু এসব কথা দিয়ে আমরা আসলে কী বােঝাতে চাই? আমরা কি এ কথাগুলাে বলে নিজেদের গাফেলতিকে জায়েজ করি? নিজেদের সান্ত্বনা দিই? বিজয়ের জন্য প্রয়ােজনীয় সব পদক্ষেপ আমাদের নবী গ্রহণ করেছিলেন। পরিকল্পনা, কঠোর পরিশ্রম, ব্যালেন্স, অগ্রাধিকার ঠিক করা, প্রতিপক্ষের ওপর আদর্শিক আক্রমণ, ভালাে নিয়্যাত, বিশ্বাসীদের উদ্বুদ্ধ করা----কোনাে কিছু তিনি বাদ রাখেননি। আমরা কী করছি? আল্লাহ বলেন, عزلها الشفازات والازمن أبث يلتقي وسارعوا إلى مفقة من تگ و আর তােমরা দ্রুত অগ্রসর হও তােমাদের রবের পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও জান্নাতের দিকে, যার পরিধি আসমানসীমূহ ও যমীনের সমান, যা মুত্তাকীদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। [তরজমা, সূরা আলে-ইমরান, ১৩৩] আমার ভাইয়েরা, একটা ছােট্ট হিসেব করে দেখুন। নিজেকে প্রশ্ন করুন, বিশ্বকাপ কিংবা অন্য কোনাে খেলার পেছনে আমি মাসে কত সময় খরচ করেছি? ১০ ঘণ্টা? ২০ ঘন্টা? ৩০ ঘণ্টা? ৫০ ঘণ্টা? ঠিক আছে। কুরআনে আল্লাহ যে প্রতিযোগিতার কথা বলেছেন, তার পেছনে আমি কতটুকু সময় দিয়েছি? আমার কতটুকু সময় দেয়া উচিত? একবার নিজের সাথে সৎ হয়ে এ প্রশ্নের উত্তর খুজুন আসুন, আমরা এই অভিযাত্রায় একসাথে শামিল হই, ইলম দাওয়াত এবং কাজের মাধ্যমে।

Post a Comment

0 Comments