জিপিএস

 জিপিএস


ধরুন, আপনি ঘুরতে বেড়িয়েছেন। হাতে অচেনা এক শহরের ম্যাপ। অথবা হাল আমলের বহল ব্যবহৃত জিপিএস। যাচ্ছেন ছােটবেলার জিগরি দোস্তের সাথে দেখা করতে। ম্যাপ কিংবা জিপিএসের ওপর ভরসা আছে আপনার। আপনি জানেন, গন্তব্যে পোছানাের পথ সেখানে ঠিকঠাক দেখানাে আছে।

এখন আপনি কী করবেন?

আপনি দশ রাস্তা ঘুরবেন না। সবচেয়ে ভালাে রুট খুঁজে বের করাব জন্যে সময় নষ্ট করবেন না; বরং নিশ্চিন্তে জিপিএস ফলো করবেন। আর এভাবে অচেনা শহরের, অচেনা গলি থেকেও হারানাে বন্ধুকে খুঁজে পেতে খুব একটা কষ্ট হবে না।
কিন্তু ম্যাপ বা জিপিএস সঠিক পথ দেখাচ্ছে কি না, তা নিয়ে যদি আপনার সন্দেহ থাকে? তাহলে কী হবে?

সে ক্ষেত্রে আপনি খুব একটা দ্রুত এগােবার সাহস করবেন না। সতর্কতার সাথে সামনে এগোবেন, থেমে থেমে। কিছুক্ষণ পরপর গাড়ি থামিয়ে পথচারীদের প্রশ্ন করবেন। আপনার মন থাকবে বিক্ষিপ্ত। আপনার গন্তব্য নিয়ে, কিংবা দেখা হলে বন্ধুকে কী বলে চমকে দেবেন, তা নিয়ে ভাবার ফুরসত হবে না। সময় কাটবে সংশয়, অস্থিরতা আর দুশ্চিন্তায়। কারণ, আপনি নিশ্চিত না আপনি সঠিক পথে আছেন কি না।

ওপরের উদাহরণের সাথে কুরআনের মিল কোথায় জানেন?

দেখুন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা কী বলেছেন। তিনি বলেন

যারা নিশ্চিত বিশ্বাস করে যে, তাদের প্রতিপালকের সঙ্গে তাদের সাক্ষাৎ ঘটবেই। এবং তাঁরই দিকে তারা ফিরে যাবে। [তরজমা, সূরা আল-বাক্বার, ৪৬]

দ্বীন ইসলাম নিয়ে সন্দেহে ভোগা মানুষ কখনাে নিজেকে নিয়ে, নিজের পথ নিয়ে নিশ্চিত হতে পারে না। সে সব সময় দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভােগে,

আসলেই কি আমি সঠিক পথে আছি?,

যখনই সে কোনাে গুনাহ ছাড়ার চেষ্টা করে, শয়তান তাকে এসে বলে :
'তুমি কি জান্নাতের জন্য এ কাজটা ছাড়ছ? যদি জান্নাত বলে কিছু না থাকে? তাহালে তাে এপার-ওপার সবই হারাবে। ভালােমতাে ভেবে দেখো কিন্তু!'

কিন্তু যারা আল্লাহর প্রতি বিনীতভাবে আত্মসমর্পণ করেছে তাদের এ সমসার মুখােমুখি হতে হয় না। এ কৌশলে শয়তান তাদের সাথে পেরে উঠতে পারে না।

দেখুন সূরা বাক্বারার এই আয়াতে আল্লাহ বলছেন,
' যারা বিশ্বাস করে...।'

কুরআনে যখন ("ধারণা করা" অথবা 'মনে করা') এর ক্রিয়া আসে তখন এর দ্বারা 'ইয়াক্বিন' বা নিশ্চয়তা বােঝায়। অর্থাৎ আল্লাহ এখানে এইসব বান্দাদের কথা বলছেন,যারা নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করে তারা তাদের রবের মুখােমুখি হতে যাচ্ছে। এবং তাঁর কাছেই ফিরে যাচ্ছে। এমন মানুষেরা নিশ্চিত জানে যে আল্লাহ এর সামনে দাঁড়িয়ে একদিন সব কাজের হিসেব দিতে হবে। সেদিন তিনি হয় জান্নাতের মাধ্যমে পুরস্কৃত করবেন অথবা শাস্তি দেবেন জাহান্নামের আগুনে।

একজন মানুষ যখন এ কথা বিশ্বাস করে, সে যখন এই সাক্ষাতের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে যায়, তখন তাঁর জন্যে আন্তরিকভাবে ইবাদত করা ও শুনাহ থেকে সরে আসা। সহজ হয়ে যায়।

প্রিয় পাঠক, কোনাে ইবাদাতের ব্যাপারে যখনি আলসেমি লাগবে, নিজেকে প্রশ্ন করবেন :

আমি কি জান্নাতের জন্য অপেক্ষা করছি না?
আমি কি জান্নাতের অস্তিত্ব নিয়ে নিশ্চিত না?
আল্লাহর হুকুম মানাই যে জান্নাত পাওয়ার উপায় তা নিয়ে কি আমার মনে কোনো সন্দেহ আছে?

তাহলে কেন আমি অলসতা করছি? অবহেলা করছি?
কাজেই, নিজের ঈমানকে শক্ত করুন, সব সংশয়কে ছুড়ে ফেলে ছুটে যান আল্লাহর রাস্তায়। অনর্থক সংশয়, সন্দেহে সময় নষ্ট করার প্রয়ােজন নেই। প্রয়ােজন নেই দশ রাস্তা ঘােরার। প্রয়ােজন নেই অন্য পথ আর পদ্ধতি নিয়ে মাথা ঘামাবার। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সাথে সাক্ষাতের সেই অসামান্য মুহূর্তের জন্যে প্রস্তুত করুন নিজের সমস্ত অন্তরাত্মাকে। যেমনটা আমাদের প্রিয়নবী বলেছেন :

من خاف أذ، ومن أذج بلغ المنزل، إلا إن سلعة الله عالية، ألا إن بلغة الله الجنة

যে ব্যক্তি ভয় করে, সে সাহরীর আওয়াল ওয়াক্তে (প্রথম প্রহরে) সফর করে। আর যে ব্যক্তি সাওয়ারীর আওয়াল ওয়াক্তেই সফর করে সে তার মানযিলে পৌছে যায়। জেনে রাখ, আল্লাহর পন্য খুবই দামী। শােন, আল্লাহর পণ্য সামগ্রী হলো জান্নাত। (১)

Post a Comment

0 Comments